জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সমাধান আসতে পারে যে পথে
জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। এবার জি এম কাদেরকে প্রত্যাহার করে রওশন এরশাদকে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদেরকে পদ ছাড়ার আহ্বান জানানো হয়। এদিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জি এম কাদের।
কে হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে সেখান থেকেই। জিএম কাদের এবং রওশন এরশাদ দুজনই জাতীয় সংসদের স্পিকারকে পাল্টাপাল্টির চিঠি দেয়ার পর প্রকাশ্যে শুরু হয় বিরোধ।
তবে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতারাই সমাধান করবেন বলে মন্তব্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির আলোকেই সমাধান হবে।’
বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন ইস্যুতে স্পিকারকে জাপার দুই নেতার পাল্টাপাল্টি চিঠি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে, জাপার সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘পার্টির সংসদীয় দলের সভায় এই সমস্যার সমাধান আসবে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ৮ সেপ্টেম্বর জাপার সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হবে।’
কেন সভা ডাকবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, ‘যেহেতু বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমানে নেই, ফলে উপনেতাই এই সভা আহ্বান করবেন।’
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন ইস্যুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে গত দুই দিনে জাপার জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ পাল্টাপাল্টি চিঠি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্পিকারকে দেওয়া চিঠিতে জিএম কাদের নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতার স্বীকৃতি চেয়েছেন। জিএম কাদেরের চিঠিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে পরদিন স্পিকারকে দেওয়া পাল্টা চিঠিতে বিষয়টি আমলে না নেওয়ার অনুরোধ করেন রওশন এরশাদ।
জাপার দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘চিঠি নিয়ে আইন-কানুন খতিয়ে দেখা হবে। আর বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তা কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে। সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাপার বর্তমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার বলেন, ‘এটি জাপার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি আমার দেখার সুযোগ নেই। তবে, বিরোধী দলের মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, দলটির নেতারাই তার সমাধান করবেন। আশা করি তারা সমস্যা সমাধান করে আসবেন।’
প্রসঙ্গত, বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার বিষয়ে দেশের সংবিধানে কিছু বলা নেই। তবে, বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশ-১৯৭৯-এ তাদের পারিতোষিক ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার স্বীকৃতি দেওয়ার একক ক্ষমতা স্পিকারের। কিন্তু এ বিষয়ে সংবিধানে কিছু উল্লেখ নেই। আবার কার্যপ্রণালি বিধিতে বিস্তারিত বিশেষ নির্দেশনাও নেই। কার্যপ্রণালি বিধিতে ২(১)(ট) বলা আছে—‘‘বিরোধীদলীয় নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসঙ্গের নেতা।’’
এদিকে, বিরোধীদলীয় নেতা বা উপনেতার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশে বলা হয়েছে—‘বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’